শুক্রবার ২৪ জানুয়ারী ২০২৫ - ১৯:৪৯
ডেমোক্র্যাট সিনেটর বের্নী স্যান্ডার্স

হাওজা / মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পৃথিবীতে আসলে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের নামে যা প্রচলিত আছে আসলে তা অলিগার্কি (ওলিগার্শি অর্থাৎ অভিজাত তন্ত্র বা মুষ্টিমেয় হাতেগোনা পুঁজিপতির ধনতন্ত্র/পয়সা তন্ত্র ও এ শ্রেণীটির আধিপত্য)।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ডেমোক্র্যাট সিনেটর বের্নী স্যান্ডার্সের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ: 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পৃথিবীতে আসলে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের নামে যা প্রচলিত আছে আসলে তা অলিগার্কি (ওলিগার্শি অর্থাৎ অভিজাত তন্ত্র বা মুষ্টিমেয় হাতেগোনা পুঁজিপতির ধনতন্ত্র/পয়সা তন্ত্র ও এ শ্রেণীটির আধিপত্য)। আর এই মুষ্টিমেয় হাতেগোনা পুঁজিপতি শ্রেণী নির্বাচনে অঢেল অর্থ ও টাকা-পয়সা খরচ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে খরিদ করে এবং প্রহসনমূলক নির্বাচন করিয়ে প্রেসিডেন্ট, পার্লামেন্ট ও সিনেট সদস্যদেরকে তারা মনোনীত করে ও নিয়োগ দেয় ও আজ্ঞাবহ সরকার গঠন করে। মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থা আসলে দুর্নীতি গ্রস্ত (corrupt) নির্বাচন ব্যবস্থা। কারণ, মাযুরায় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এই চরম সংখ্যালঘু অতি মুষ্টিমেয় হাতেগোনা দুর্নীতিপরায়ণ পুঁজিপতি (অলিগার্কি বা অভিজাত) শ্রেণী হচ্ছে ঐ মাযুরা সমাজের ০•০০০৫ %; অর্থনৈতিক বৈষম্য, শোষণ, অন্যায়-অনাচার, অত্যাচার, আয়কর ফাঁকি সহ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও চারিত্রিক দুর্নীতিতে লিপ্ত এই চরম সংখ্যালঘু মামুরা (মার্কিন)ও পশ্চিমা অভিজাত পুঁজিপতি শ্রেণী মধ্যযুগীয় সামন্তদের আধুনিক রূপ ও সংস্করণ এবং ঐ মধ্যযুগে এই সামন্ত শ্রেণী সবকিছু যেমন নিয়ন্ত্রণ ও কুক্ষিগত করে রেখেছিল ঠিক তেমনি বর্তমানে ধনতান্ত্রিক অলিগার্কি বা পুঁজিপতি অভিজাত শ্রেণী সরকার ও প্রশাসন সহ অর্থসম্পদ সবকিছু নিজেদের করায়ত্ত করে রেখেছে। এই অতি নগণ্য মুষ্টিমেয় হাতেগোনা পুঁজিপতি শ্রেণী মাযুরায় নির্বাচনী খরচ ও ব্যয়ের সিংহভাগ বহন করে। আসলে মাযুরার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) প্রেসিডেন্ট, সিনেটর এবং কংগ্রেস সদস্যরা জনগণের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্য নয় বরং তারা সবাই মাযুরার ঐ চরম সংখ্যালঘু অলিগার্কি  (অভিজাত শ্রেণী) কর্তৃক মনোনীত ও নিয়োগপ্রাপ্ত আজ্ঞাবহ চাকর-বাকর, ভৃত্য, গোলাম ও কর্মচারী স্বরূপ। তাই মাযুরায় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) প্রেসিডেন্ট, সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের কোনো স্বাধীনতা, স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য নেই। আর এ থেকে প্রমাণিত ও প্রতীয়মান হয় যে মাযুরায় প্রকৃতপক্ষে কোনো গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র নেই বরং সেখানে যেটা আছে সেটা আসলে অভিজাততন্ত্র বা নয়া সামন্ততন্ত্র (নিওফিউডালিজম/ neo feudalism)। আসলে গণতন্ত্র ও ধনতন্ত্র একদম বেমানান এবং ধনতন্ত্রের সাথে গণতন্ত্র মোটেও খাপ খায় না। কারণ ধনতন্ত্র আসলে অর্থনৈতিক একনায়কতন্ত্র স্বরূপ যার অর্থনৈতিক শক্তি ও ক্ষমতার দাপটের কাছে রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সব কিছুই নতি স্বীকার করে এবং কেনা গোলাম ও দাসে পরিণত হয়।আর এটা হলে প্রকৃত গণতন্ত্রই আর তখন বিদ্যমান থাকে না! অতএব মাযুরার জনগণকে প্রহসনমূলক নির্বাচনী খেলায় মত্ত করে রাখা হয়েছে।

    বের্নী স্যান্ডার্সের মতে মাযুরা সমেত সমগ্র বিশ্বের ওপর এই মুষ্টিমেয় ধনতান্ত্রিক অলিগার্কিই (ধনতান্ত্রিক অভিজাত শ্রেণী) কর্তৃত্বশীল (হাকেম/ حاكم) রয়েছে। আর এরা বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ১% এর কম হয়েও এদের হাতেই রয়েছে বিশ্বের ৯৫% ধন-সম্পদ!

করোনা মহামারী চলাকালে (সাম্প্রতিক কালে) পৃথিবীর ৫০০ কোটি মানুষ আরো বেশি দরিদ্র হয়ে গেছে এবং অতি মুষ্টিমেয় এই ধনতান্ত্রিক অভিজাত শ্রেণীর ধন-সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইলান মাস্ক সহ ট্রাম্পের সমর্থনকারী পুঁজিপতিদের ধন-সম্পদ এই দুই আড়াই মাসে বহু বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের এ নির্বাচনের ব্যয় ও খরচ বহন করার পর! তাহলে প্রমাণিত হল যে মাযুরার নির্বাচন আসলে টাকার হোলি খেলা। আর এ নির্বাচনে পুঁজিপতিরা বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে প্রেসিডেন্ট, সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের নির্বাচিত ও সরকার গঠন করিয়ে তাদের মাধ্যমে বৈধ অবৈধ অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নেয়। তাই মাযুরার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) নির্বাচনে পুঁজিপতিদের এত বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ ও ব্যয়ভার বহন আসলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কারীদের রাজনৈতিক ঘুষ ও উৎকোচ প্রদানের নামান্তর। তাহলে প্রমাণিত হয় যে মাযুরার গোটা রাষ্ট্রীয় সরকারী ব্যবস্থা ও তন্ত্র আসলে ফাসেদ (করাপ্ট) ও দুর্নীতি পরায়ণ তন্ত্র ও ব্যবস্থা। স্মর্তব্য যে এই ফাসেদ ফাসেক (দুর্নীতি পরায়ন) দেশ ও রাষ্ট্রের (মাযুরা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) বুনিয়াদ ও ভিত্তি হয়েছে আমেরিকা মহাদেশ জবরদখল, সন্ত্রাসবাদ, আগ্রাসন, যুদ্ধ এবং ঐ মহাদেশের আসল অধিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের গণহত্যা, জাতিগত নিধন, প্রজন্ম হত্যা, লুটপাট, অন্যায়, অনাচার, অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী অপরাধসমূহের ওপর। এদিক থেকে অর্থাৎ নিজ দেশের অধিবাসী ও নাগরিক আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের কয়েক শতাব্দী ধরে গণহত্যা করে মাযুরার তথাকথিত সরকার, প্রজাতন্ত্র ও গণতন্ত্র গণহত্যা তন্ত্রে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। (এ ছাড়া তথাকথিত গণতান্ত্রিক ইউরোপীয় দেশগুলো গণতন্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদের অ্যামালগাম বা সংকর তন্ত্র বানিয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জবরদখল করে কোটি কোটি মানুষকে হত্যা এবং তাদের সহায় সম্পদ সব লুন্ঠন করেছে। অতএব ইউরোপীয় দেশগুলোর গণতন্ত্রও সাম্রাজ্যবাদের সাথে সংকর হয়ে কার্যতঃ গণহত্যাতন্ত্রেই রূপান্তরিত হয়েছে।

তাই পশ্চিমা গণতন্ত্র আসলেই গণহত্যা তন্ত্র। (বিশেষ দ্রষ্টব্য: বুদ্ধিবৃত্তিক, ন্যায় (বা আদল) ভিত্তিক, নৈতিক-আদর্শিক, মানবিক ও মানবতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে গণতন্ত্রের সাথে সাম্রাজ্যবাদ কি আসলেই খাপ খায়?! উত্তর: মোটেও খাপ খায় না।)

    অতএব মাযুরা (মার্কিন) সরকার রাশিয়ার পুতিন ও তার সরকারকে যে অলিগার্কি বলে প্রচার করে ও বলে বেড়ায় তা তার নিজের ক্ষেত্রেও শতভাগ প্রযোজ্য অর্থাৎ মাযুরা (মার্কিন) সরকারও চরম সংখ্যালঘু অতি মুষ্টিমেয় হাতেগোনা চরম দুর্নীতিপরায়ণ পুঁজিপতি অভিজাতদের (অলিগার্কি) স্বার্থ সংরক্ষণকারী আজ্ঞাবহ ভৃত্য গোলাম সরকার।

   পৃথিবীর অধিকাংশ স্থান ও দেশ এমনকি গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী দাবিদার দেশগুলোয় প্রকৃত স্বচ্ছ গণতন্ত্র নেই বরং গণতন্ত্রের নামে মাযুরা সহ পাশ্চাত্যে যা কিছু প্রচলিত আছে আসলে তা 'গণহত্যা ও গণভাওতাতন্ত্র' ছাড়া আর কিছু নয়।

আর এ বিষয়টাই ডেমোক্র্যাট সিনেটর বের্নী স্যান্ডার্সের উপরিউক্ত বক্তব্য থেকে নির্ণয় ও নিরূপণ করা সম্ভব।

সংযুক্তি: মাযুরা- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 

মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha